কুয়াশা-২
পাপিয়া ঘোষ সিংহ
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পর আজ আকাশ পরিস্কার। সন্ধ্যা বেলা ছাদে পায়চারি করতে করতে হঠাৎই চাঁদের দিকে চোখ পড়তেই কত ভালোলাগা সাথে হাজার প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকলো রুমেলার।
বছর দুই হলো রুমির বিয়ে হয়েছে। রোমান্টিক দীপনের সাথেই। অনেক মান-অভিমান টানাপোড়েন পেরিয়ে ভালোবাসা পরিণতি পেয়েছে। বিয়ের পর এক বছর ওদের কেমন স্বপ্নের মতো কেটেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে থেকে রাতভোর পর্যন্ত সবসময়ই যেন এক দুরন্ত প্রেম একটা বছর কিভাবে দাপিয়ে নিয়ে গেল। তারপর কেমন যেন ফিকে হতে থাকলো জীবনের রঙ। দীপন–দীপঙ্কর চ্যাটার্জি তার অফিসে প্রোমোশন পেয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সারাক্ষণ কাজ আর কাজ,ভীষণ চাপ। এরপর যেটুকু সময় পায় তখন আত্মীয়-বন্ধু, কলিগ ও তাদের ফ্যামিলি ফোন আসা-যাওয়া এসব নিয়ে দীপনের রুমির জন্য সময় থাকে না। সারাদিনের সমস্ত সেরে রাতের বিছানায় ও দীপন ঘুমন্ত এক পাথর।
রুমি একটি কলেজে পড়ায়, সকাল থেকে তারও কাজ থাকে। দীপনকে অফিসের আগে ব্রেকফাস্ট দেওয়া, লাঞ্চ বানিয়ে প্যাক করে দেওয়া, দীপন বেরিয়ে গেলে নিজে স্নান-খাওয়া সেরে কলেজে যাওয়া। রুমি প্রতিদিনই দীপনের পরে বেরিয়ে আগে বাড়ি ফেরে। যদিও কাজ অনুসারে এটাই স্বাভাবিক। রুমিও সংসার, কলেজ,সোশ্যাল ওয়ার্ক, বাগান করা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, তবুও দীপনের কাজের ব্যস্ততা য় দূরে সরে যাওয়া যেন ক্রমশ রুমিকে একা করে দিচ্ছে। এত কাজেও যেন রুমির দিন কাটতে চায়না।
চাঁদের দিকে তাকায় রুমি, মনে পড়ে কত পুরোনো কথা। এই চাঁদকেই তো দীপন রুমির রূপের প্রতিচ্ছবি বলতো। কত প্রতিশ্রুতি ছিল দীপনের! রুমি আমরা কখনও বুড়ো হবো না, রুমি আমরা সারাজীবন একসাথে চাঁদ দেখবো। আকাশে মেঘ চাঁদের লুকোচুরি খেলায় আমরা দুজন রূপকথার দেশে পারি দেবো।আমি তোমার আকাশ,আর আমার বুকে তুমি আমার চাঁদ রুমি।
আজ আকাশের বুকে চাঁদকে দেখে রুমির মনে হলো এদের তো চিরন্তন সম্পর্ক। মানুষের সম্পর্ক কেন এত আপেক্ষিক? দীপন এখনো ফেরেনি, আজ কি দীপন আমার সঙ্গে চাঁদ দেখবে?
কলিং বেলের শব্দে নীচে তাকায় রুমি। ঐ তো দীপন এসেছে। ছুটে নীচে নেমে আসে রুমি। দীপনের, হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে ঘরে রেখে আসে,তারপর চা নিয়ে দীপনের কাছে গিয়ে বলে দীপন একবার ছাদে যাবে? দীপন একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন করতে করতে অন্য ঘরে চলে যায়। মনে কুয়াশা ঘন হয়ে আসে রুমেলার। দীপনের ব্যবহার পাল্টে যাওয়ার কারণ কি শুধু কর্মব্যস্ততা?না কি অন্য কিছু? কি করবে রুমি!কুয়াশার আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছে। সামনের পথ বড়োই অস্পষ্ট।